প্রাণ ম্যাঙ্গো পাল্প তৈরি হয় পৃথিবীর সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে
আধুনিক জীবনে সব মানুষদেরই পছন্দ বিভিন্ন ধরনের বোতলজাত পানীয়। এসবের মাঝে প্রাণ এর উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ম্যাঙ্গো/ ম্যাঙ্গো ফ্লেভারড ড্রিংক অন্যতম। প্রাণ এর এই ম্যাঙ্গো ড্রিংসগুলোর মূল উপাদান হচ্ছে আম। আম থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পদ্ধতিতে তৈরি হয় পাল্প, আর তা থেকেই পরবর্তীতে তৈরি হয় সুস্বাদু সব ড্রিংস। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্রাণ এর বিভিন্ন ধরনের ম্যাঙ্গো ড্রিংস। প্রাণ ড্রিংস এর এই বৈশ্বিক যাত্রার নেপথ্য কথা নিয়ে এ আয়োজনে থাকছে প্রাণের ম্যাঙ্গো পাল্প তৈরির প্রযুক্তি।
আম চাষীদের কথাঃ
চলমান অর্থবছরে প্রাণ সংগ্রহ করেছে ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন আম। আর এ আম সংগ্রহ করা হয়েছে প্রাণের নিবন্ধিত ৩০ হাজার আম চাষীদের বাগানের আম থেকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ও বেশি আম উৎপাদনশীল জেলা রাজশাহী, চাঁপাই এবং নাটোরে এ আমগুলো উৎপাদিত হয়।
বাংলাদেশে একমাত্র প্রাণ ই কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে পাল্প এর জন্য আম উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক আমচাষীদের বিশেষ যত্নে উৎপাদিত আম নিয়ে আসা হয় ফ্যাক্টরিতে। র্যান্ডম স্যামপ্লিং ও বিভিন্ন যাচাই বাছাই শেষে, বারকোড প্রদানের মাধ্যমে চাষীদের আম নেয়া হয় পাল্প তৈরির জন্য।
আম বাছাইঃ
ওজন করার পর পাল্পিং মেশিনের কনভেয়ার বেল্টে দেয়া হয় আম, যেখানে প্রাথমিক বাছাই করা হয়। দু’পাশ থেকে দক্ষ কর্মীরা তাদের অভিজ্ঞ চোখে বাছাই কাজ করতে থাকেন, যাতে কোন ধরনের নষ্ট বা অপূর্ণ আম ওয়াশিং এ না যায়।
আম ওয়াশঃ
প্রথম ধাপে ঠান্ডা পানিতে ওয়াশ করা হয় আম। পরবর্তীতে গরম পানিতে ওয়াশ হবার পর ব্রাশ ওয়াশিং হয়ে যাবারো কনভেয়ার বেল্টে আসে আম। এই কনভেয়ার বেল্টে পাল্পিং এর জন্য চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয় আম। অর্থাৎ শুরু থেকে ছয়টি ধাপে পরীক্ষা ও পরিশোধনের মাধ্যমে পাল্পিং এর জন্য প্রস্তুত হয় আম।
আমের আঁটি ছাড়ানো ও পরিশোধনঃ
পরবর্তীতে আম চলে যায় ডি-স্টোনারে। যেখানে আঁটি এবং আমের বহিরাবরণ আলাদা আলাদা হয়ে চলে যায় দু’দিকে এবং এবং ক্রাশার থেকে পাল্প চলে যায় ইনিশিয়াল ট্যাংক-এ। এই ট্যাংক থেকে পাল্প চলে যায় একটি রিফাইনারে। যেখানে প্রথম ধাপে পরিশোধন হয় পাল্প। সেখান থেকে চলে যায় পরবর্তী স্টোরেজ ট্যাংক-এ।
আমকে জীবাণুমুক্তকরণঃ
পরিশোধিত পাল্প, প্রি-হিটিং করে চূড়ান্ত পরিশোধনের জন্য সেন্ট্রিফিউগাল ডিকন্টারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করে পাঠিয়ে দেয়া হয় স্টেরিলাইজেশান মেশিনে। স্টেরিলাইজারে পাল্প ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করে ধিরে ধীরে তা আবার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা হয়। এরফলে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত হয় পাল্প।
পাল্প সংরক্ষণঃ
এই জীবাণুমুক্ত এবং পরিশোধিত পাল্প কোন রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই অ্যাসেপটিক ব্যাগে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমান বিশ্বে নিরাপদে, জীবাণুমুক্তভাবে এবং প্রকৃত খাদ্যগুণ ধরে রাখার জন্য এই অ্যাসেপটিক ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এরপর পাল্পসহ অ্যাসেপটিক ব্যাগগুলোর উপর ব্যাচ নাম্বার ও উৎপাদনের অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে তা ড্রামের সাহায্যে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত হয়।
পাল্প প্রস্তুত ও সংরক্ষণ হয় হাতের স্পর্শ ছাড়াঃ
তৈরিকৃত পাল্প চলে যায় ফ্যাক্টরিতে। যেখানে সম্পূর্নভাবে হাতের স্পর্শ ছাড়া অটোমেটিক মেশিনে প্রস্তুত হয় প্রাণ ফ্রুটোসহ জনপ্রিয় সব ম্যাঙ্গো ড্রিংস।
বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছায় ১৪১ টি দেশেঃ
বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রাণের ম্যাঙ্গো ড্রিংস পৌঁছায় পৃথিবীর ১৪১ টি দেশে। যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং ওশেনিয়া অন্যতম। যে প্রযুক্তি এবং মেশিনে এ পাল্প এবং ম্যাঙ্গো ড্রিংস তৈরি হয়, একই প্রযুক্তি এবং মেশিনে তৈরিকৃত জুস সরবরাহ হয় বাংলার প্রতিটি প্রান্তে।