সাম্প্রতিক সময় ও গুজব

সাম্প্রতিক সময় ও গুজব

Published on: 1st August, 2019

গুজবঃ
গুজব অর্থ হলো জনসাধারণের সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে, ঘটনা বা ব্যক্তি নিয়ে মুখে মুখে প্রচারিত কোন বর্ণনা বা গল্প। আর সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায়, গুজব হল এমন কোন বিবৃতি যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা ক্ষেত্র বিশেষে কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
গুজব অনেক ক্ষেত্রে ‘ভুল তথ্য’ এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক তথ্য’ এ দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ‘ভুল তথ্য’ বলতে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যকে বুঝায় এবং ‘অসঙ্গত তথ্য’ বলতে বুঝায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা।

গুজবের ভয়াবহতা ও ফলাফলঃ
গুজবের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো গুজব রটিয়ে মানুষকে ভুল তথ্যের মাধ্যমে প্রভাবিত করা হয়। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে নানা বিতর্কিত ও অসামাজিক ঘটনা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও খুন-গুমের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘতে। মূলত গুজব রটিয়ে একটি নির্দিষ্ট মহল বা গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করে নেয়। আর সাধারণ মানুষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

গুজব এবং ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশঃ
কিছু দিন আগে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই-এ রেনু নামে দু’সন্তানের জননী মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে একজন বাকপ্রতিবন্ধীও গণধোলাই-এ মারা যান। আইন শালিস কেন্দ্রের তথ্য মতে শুধু ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ৩৬ জন এভাবে গুজবের বলি হয়েছেন। এভাবে গুজব রটিয়ে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাই, এখনই যদি গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমরা আওয়াজ না তুলি তাহলে এই তালিকা আরো লম্বা হবে।

একটি তথ্য গুজব কী না তা যেভাবে যাচাই করবেনঃ
অনলাইনে প্রকাশিত যে কোন ছবি, খবর বা তথ্যটি সঠিক কি’না বা এর সোর্স কি তা যাচাই করতে গুগলসহ বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করেও তথ্য যাচাই করতে পারেন।
প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ছবি, ভিডিও বা তথ্য শেয়ার করতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোন তথ্য, ছবি বা ভিডিও সঠিক কিনা সেটা বুঝতে হলে শেয়ার করা তথ্যটি কে শেয়ার করেছে সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
পরিচিত ও বিশ্বস্ত কোন বন্ধু, অনলাইন সেলিব্রেটি অথবা কোন পত্রিকা তথ্যের সুত্র কি তা জানতে হবে। এছাড়া, যে বা যারাই এই তথ্যগুলো শেয়ার করেছে তারা সেটা নিজে দেখেছে, নাকি অন্য কারো কাছ থেকে জেনেছে সেটা জানাও খুব জরুরি।
যখন কোন মুভমেন্ট তথ্য আন্দোলন বা কোন সংকটকালীন পরিস্থিতি বিরাজ করে তখন কোন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবার আগে বারবার ক্রস চেক করে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিৎ। তারপরও যদি মনে হয়, সেই তথ্য শেয়ার করলে পরিস্থিতি আরো সংকটপূর্ন হতে পারে সেক্ষেত্রে এমন তথ্য শেয়ার না করাই ভালো।
আরেকটি বিষয়, যখনই কোন তথ্য শেয়ার করবেন অবশ্যই একটু সময় নিবেন। এক থেকে চারঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর শেয়ার করলে এই সময়ের মধ্যে ঐ তথ্য সঠিক নাকি গুজব সে সম্পর্কে আপনি একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন।
গুগলে ইমেজ সার্চ করেও ছবি সঠিক নাকি মিথ্যা তা জানা সম্ভব। গুগলে ইমেজ সার্চ অপশনে যে সোর্স থেকে ইমেজগুলো এসেছে সেই সোর্সের লিংক অথবা ছবি গুগল ইমেজে ইনপুট দিলে ওই ছবির সাথে সম্পর্কিত ছবিগুলো দেখা যায়। তখন প্রকৃত ছবি কবে কোন সাইটে বা অনলাইনে কোথায় আপলোড করা হয়েছে তা জানা যায়। ছবি বা তথ্যটি নতুন নাকি পুরনো, সঠিক নাকি ভুল এবং কতো তারিখের তাও জানা যায়।
শেষ কথা হলো, সাবধানের মার নেই। যে কোন তথ্য শেয়ার করবার সময় উপরোল্লিখিত নিয়মে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে যে কোন গুজবকেই রুখে দেয়া সম্ভব।