টেকসই উন্নয়ন অর্জনে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে সাসটেইনাবিলিটি সামিট

দেশের প্রচলিত ব্যবসায়িক কার্যক্রমগুলোর আরও টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যের (এসডিজি) সঙ্গে সমন্বয় করার প্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘সাসটেইনাবিলিটি সামিট’। বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) বিশ্লেষণে উঠে আসে দেশে এসডিজি অর্জনে ব্র্যান্ডগুলো কীভাবে, কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে সেসব বিষয়ও।
মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে প্রথমবারের মতো এ সামিটের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে এ সাসটেইনাবিলিটি সামিটের আয়োজন করা হয়। আকিজবশির গ্রুপের পরিবেশনায় ও ইনটেলিয়ার সহযোগিতায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া এ সামিটের আলোচনায় ছিল একটি কি-নোট সেশন, দুটি প্যানেল ডিসকাশন, তিনটি ইনসাইট সেশন এবং একটি কেস স্টাডি। এতে অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ের টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও ভাবনা শেয়ার করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সম্মিলিতভাবে আমাদের কি চর্চা করা উচিৎ সেটার ওপর। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এখন আর শুধু একটি ধারণা নয়, এটি প্রতিটি ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের ডিএনএর অংশ হওয়া উচিৎ। আমরা পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের আজকের সিদ্ধান্তই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের ভূমিকাকে সুদৃঢ় করবে।
সম্মেলনটি শুরু হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতারের কি-নোট সেশনের মাধ্যমে। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ে টেকসই এবং এর অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। এরপর আকিজবশির গ্রুপের চেয়ারম্যান বশিরউদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির টেকসই চর্চা নিয়ে একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করেন।
আয়োজনটির প্রথম প্যানেল আলোচনার শিরোনাম ছিল, ‘ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য কেন বাংলাদেশি ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোকে টেকসই হতে হবে’। এটি পরিচালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও বিবিএফ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ডিন ও মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. এ কে এনামুল হক, ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম আর এফ হুসেইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক ড. মেলিটা মেহজাবিন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, সোশ্যাল মার্কেটিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সায়েফ নাসির।
তিনটি ইনসাইট সেশনে আধুনিক ও টেকসই অর্থায়ন, ব্যবসায়িক খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। সেশনগুলো পরিচালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের ইএসজি অফিসার লোপা রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অ্যাডভাইজর অ্যান্ড ফরমার প্রেসিডেন্ট ও লিডারশিপ অ্যাকাডেমির মেন্টর শেহজাদ মুনিম, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সাইফ ইসলাম।
সম্মেলনটির দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা বা সিইও প্যানেলে নেতৃত্বের ভূমিকা এবং টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাটি পরিচালনা করেন পরিবর্তনকামী ব্যবসায়িক নেতা আসিফ ইকবাল।
আলোচনায় অংশ নেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও আহসান খান চৌধুরী, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাব্বির হাসান নাসির, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালী চৌধুরী, এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের গ্রুপ সিইও কে এ এম মাজেদুর রহমান, ইনোভেশন কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুবায়েত সারওয়ার এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
অংশগ্রহণকারীরা টেকসইকে ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করার এ সুযোগকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন এবং এ বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানান।